ব্রহ্মস্থান বা কেন্দ্রস্থান

জমির মধ্য বিভাজন স্থানকে ব্রহ্মস্থান বলা হয়। ৮১টি পরিভাষা (স্প্যান), ৯টি বর্গ যেখানে বাস্তু পুরুষের নাভিস্থলের ঠিক চারদিকে অবস্থান করছে, সেটি হল ব্রহ্মস্থান।

চিত্র:
‘ময়মতম’ অনুসারে যে সকল গুরুত্বপূর্ন স্থান আছে সেগুলিকে ‘মর্ম’ বলা হয়েছে। এগুলি একরকম রেখা যা উত্তর থেকে দক্ষিণ জুড়ে রয়েছে এবং পূর্ব থেকে পশ্চিম জুড়ে রয়েছে। উত্তর-দক্ষিণ রেখাকে ‘নাড়ি’ বলা হয়েছে এবং পূর্ব-পশ্চিম রেখাকে ‘বংশ’ বলা হয়। ব্রহ্মস্থানের কোনাকুনি সরলরেখা টানলে সেটি হবে ‘কোণসূত্র’। এইটি প্রচণ্ড গুরুত্বপূর্ণ স্থান। বাড়ি তৈরির সময় এর সুরক্ষা প্রয়োজন।

চিত্র:

বৃহদসংহিতা অনুসারে লম্বা কোনাকুনি সরলরেখা সেখানে গিয়ে মিলিত হচ্ছে এবং বর্গগুলির মধ্যস্থল হল এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এই স্থানটিকে যেন কোনও ভাবেই আঘাত না করা হয়। সুতরাং ব্রহ্মসস্থান ও শক্তিস্থলকে রক্ষা করতে হবে।
 
বাসস্থান ব্রহ্মস্থান বা কেন্দস্থান রাখার পদ্ধতি :
 
  • যতটা সম্ভব ব্রহ্মস্থান বা কেন্দস্থানকে পরিষ্কার রাখতে হবে এবং সম্ভব হলে ব্রহ্মস্থান থাকবে মুক্ত আকাশের তলায়।
  • ব্রহ্মস্থানে থাম, পিলার, কুয়ো বা জঞ্জাল ফেলার জায়গা কিছুতেই করা যাবে না।
  • ব্রহ্মস্থানকে ফাঁকা রেখে যে জায়গা থাকবে, তাতে সামাজিক উৎসব অনুষ্ঠান করা যেতে পারে।
  • ছোটখাটো বাড়িতে যেখানে ব্রহ্মস্থান ফাঁকা রাখার প্রশ্নও ওঠে না, সেটি লিভিং রুম করা যেতে পারে এবং ঘরটির মাঝখানে কোনও রকমের আসবাব রাখা উচিত নয়।
  • রেসিডেন্সিয়াল কমপ্লেক্স্ বা অ্যাপার্টমেন্টের নকশা এমনভাবে করতে হবে যাতে ব্রহ্মস্থান ফাঁকা রাখা যায় এবং কেউ সেখানে যেন চলাফেরা না করে।
 
কলকারখানা অফিস ব্রহ্মস্থান বা কেন্দস্থান :
 
  • কলকাখানায় ব্রহ্মস্থানটিকে ‘লন’ বা উঠোন হিসেবে রাখা যেতে পারে। সম্ভব হলে মধ্যস্থলে ছোট ফুল গাছ বা তুলসী গাছের বাগান করা যেতে পারে।
  • ব্রহ্মস্থানে কুয়ো বা পাম্প যেন তৈরি করা না হয়। এখানে অস্থায়িভাবেও কখনও ভারী জিনিস রাখা উচিত নয়।
  • অফিসে ব্রহ্মস্থানটিতে বাগান করা যেতে পারে। ব্রহ্মস্থানটিকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখা উচিত। ছোট ছোট সুন্দর গাছপালা দিয়ে সাজালে ভাল হয়। প্রয়োজনে ব্রহ্মস্থানে কনফারেন্স রুম করা যেতে পারে। মাঝে-মধ্যে মিটিং হবে কিন্তু কোনও রকমের ভারী টেবিল ও অন্যান্য আসবাব ব্রহ্মস্থান রাখা যাবে না।
  • প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ব্রহ্মস্থানটি যেভাবে ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে তা মেনে চললে শান্তি ও সমৃদ্ধি অবশ্যই লাভ করা সম্ভব।
 
পরিশেষে জানাই, বাড়ির ব্রহ্মস্থান ও মর্মস্থান মানব শরীরের মর্মস্থানের মতোই অত্যন্ত সংবেদনশীল। এ জন্য ব্রহ্মস্থানে কোনও অপবিত্র বস্তু যেমন উচ্ছিষ্ট বা পাদুকা রাখা অনুচিত তেমনি পেরেক পোঁতা বা গর্ত করে কিছু ব্রহ্মস্থানে নির্মাণ করাও অশুভ। শাস্ত্রমতে বাস্তু পুরুষের ব্রহ্মস্থানের ও মর্মস্থানের যে অংশের হানি হবে গৃহস্বামী ও গৃহে বসবাসকারীর দেহের অনুরূপ স্থানে পীড়া হবে।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন