রত্ন-পাথরের যত্ন
যে কোন বস্তুর প্রতি যথার্থ যত্ন নিলে তা যেমন দীর্ঘস্থায়ী উজ্জ্বল ও সুন্দর থাকে, রত্ন-পাথরের বেলায়ও তাই। আর তা’নাহলে অযত্ন, অবহেলায় রত্ন-পাথর নেহায়েত সাদামটা, মেটমেটে, মলিন একরাশ সাধারণ খনিজ পদার্থের সামিল মনে হবে। শুধু তাই নয় এই সব রত্নের প্রাকৃতিক গুণাগুণ অর্থাৎ এর অন্তস্থ শক্তিরও হানি হতে পারে।
মুল্যবান অলংকার সংরক্ষণের জন্য যেমন বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়, ঠিক তেমনি রত্ন-পাথর সংরক্ষণ ও ব্যবহারের বেলায়ও কতিপয় নিয়ম বা পদ্ধতি অনুসরণ করত হয়। পাঠক নিশ্চয়ই জানেন মূল্যবান রত্নের আকৃতি সাধারণতঃ শিলা পাথরের মতো হয় না। সাধারণতঃ অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র আকৃতির মূল্যবান রত্ন-পাথরের সাথেই আমরা বেশী পরিচিত। সংগত কারণেই সংরক্ষণ করে এই গুলোর নিরাপত্তা, সহজে বহন করার সুবিধা বিবেচনা করে প্রায়শঃ ছোট ছোট বাক্সে রত্ন-পাথরকে রাখা হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে নিজের অজান্তেই অভিজ্ঞ পাথর বিশেষজ্ঞের নিকট কতিপয় সংরক্ষণ ও ব্যবহার পদ্ধতি ক্রটি পরিলক্ষিত হয়েছে। ফলে সেই সব বিশেষজ্ঞের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা এবং রত্ন-পাথর সংরক্ষণের প্রাচীন এবং আধুনিক বেশকিছু পদ্ধাতির সাথে পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দিব।
সনাতন পদ্ধতিতে দেখা যায় ছোট ছোট বাক্সে একই সাথে বিভিন্ন প্রকার রত্ন-পাথর গাদাগাদি করে রাখা হয়। আজো অনেকেই সেই সনাতন পদ্ধতিকেই অনুসরণ করে থাকে। কিন্তু ইহা সঠিক পদ্ধতি নয়। কারণ প্রত্যেক প্রকার রত্ন-পাথরের কাঠিন্যতা, ঔজ্জল্য, রাসায়নিক গুণাগুণ এবং বর্ণ ভিন্নপ্রকৃতির। পাশাপাশি সন্নিহিত একই বাক্সে থাকার কারণে এদের মধ্যে রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া(Chemical Reaction) সংঘটিত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। সে কারণেই বিভিন্ন প্রকার রত্ন-পাথরকে তাদের প্রকরণ অনুযায়ী পৃথক করে আলাদা আলাদা বাক্সে রাখতে হয়। প্রতিটি রত্ন-পাথরের বাহ্যিক অবয়বের যেন পরিবর্তন না হয় সেজন্য দুটি রত্নের মাঝে সামান্য পরিমাণ তুলা অথবা টিস্যু পেপার ব্যবহার করতে হয়। এর চেয়ে আরো সহজ এবং নিরাপদ পদ্ধতি হল প্রতিটি রত্নকে পরিমাণমত তুলা অথবা অত্যন্ত নরম টিস্যু পেপারে মুড়িয়ে প্যাকেট বাক্সে রাখা যেতে পারে। রত্নের প্যাকেট বা বাক্সে এমন অতিরিক্ত রত্ন-পাথর রাখবেন না যাতে একটা আরেকটার উপর চাপাচাপির পর্যায়ে পৌঁছে, এতে যে কোন রত্ন-পাথর ভেঙ্গে যাওয়া বা ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এর পাশাপাশি সংরক্ষককে আরো একটি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। তা হলো ইমিটেশন, সিনথেটিক বা কৃত্রিম রত্ন-পাথর অবশ্যই প্রাকৃতিক রত্ন-পাথর গুলোর সাথে রাখা একেবারেই অনুচিত। কেননা প্রাকৃতিক রত্ন-পাথরগুলো সর্বদাই তাদের স্বকীয় রাসায়নিক গুণাগুণ অনুযায়ী মহাজাগতিক রশ্মি (Cosmis Ray’s) আলোকে প্রভাবাম্বিত হয়। সে অনুপাতে কৃত্রিম বা ইমিটেশন অথবা সিনথেটিক রত্ন পাথরগুলো সে অনুপাতে প্রভাবাম্বিত হয় না। অপরদিকে এই দুটি রত্ন-পাথরের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে বর্ণগত মিল থাকলেও উভয়ের কাঠিন্যতা, আপেক্ষিক গুরুত্ব, রাসায়নিক গুণাগুণ, প্রতিসরণাংক প্রায় ক্ষেত্রেই অনেক পার্থক্য থাকে। সে কারণেই কৃত্রিম এবং প্রাকৃতিক রত্নের একত্রে সমাবেশ বা একত্রে রাখা সমীচিন নয়। মহা বিশ্বে যে কোন বস্তুর স্থায়ী ক্ষয়কার্য সম্পন্ন করার জন্য প্রধানতঃ বাতাসের আর্দ্রতাকে দায়ী করা হয়। বাতাসের আর্দ্রতা রত্নের ঔজ্জ্বল্য নষ্ট করতে পারে। তেমন পারে প্রখর রশ্মিও। আগুন, সাবান, গরম তেল, পানি ইত্যাদি কোনটাই মূল্যবান রত্ন-পাথরের অনুকূল নয়। এদের সংস্পর্শে রত্নের নিজস্ব রং ও জৌলুষ উজ্জ্বলতা ধীরে ধীরে নষ্ট হয়।
রত্ন-পাথর পারত পক্ষে ভিজানো উচিত নয়। যতবেশী সাবান, তেল পানিতে আপনার রত্ন-পাথর ডুবাবেন ততই তার ঔজ্জ্বল্য কমার সম্ভাবনা থাকবে। একথা মনে রাখতে হবে যে, যে কোন রত্ন-পাথর যেমন- বিশেষ করে মুক্তা যতবার ভিজবে ততবার তার সৌন্দর্য, উজ্জ্বলতা কমবে এবং কিছুদিন পর দেখা যাবে আপনার মুক্তা রত্নটি সাধারণ সাদা একটি ঢেলায় পরিণত হয়েছে। এমনকি হীরার মতো রত্নও বেশী ভেজালে তার দ্যুতি কমে যায়।
রত্ন-পাথর শুধু সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি, সুরুচি ও সৌখিনতার পরচর্যাই নয়। শাস্ত্রমতে অশুভ গ্রহ প্রতিকার, সৌভাগ্য আনয়ন, রোগ ব্যাধি উপশমেও সহায়ক।
0 comments:
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)